Your browser does not support JavaScript! গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নারীর অন্তর্ভুক্তি জরুরি

গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নারীর অন্তর্ভুক্তি জরুরি

গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নারীর অন্তর্ভুক্তি জরুরি


প্রান্তিক পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে আইনী সহায়তা প্রদানে গ্রাম আদালত স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে সহজে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং গ্রাম আদালতের কার্যক্রমে নারী নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রান্তিক জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য

জন্য প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা যার মাধ্যমে গ্রামীণ আদালতগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা সম্ভব

 রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত গ্রামীণ নারী প্রান্তিক জনগণের জন্য জেন্ডার-সংবেদনশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ আদালত সেবার গুরুত্ব- শীর্ষক এক জাতীয় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন

বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউএনডিপি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় পরিচালিত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্প আয়োজিত এই বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মুমতাজ আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, ইউএনডিপির সিনিয়র গর্ভনেন্স স্পেশালিস্ট তানভীর মাহমুদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংস্থা, একাডেমিয়া এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা

বৈঠকের সঞ্চালনায় ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয় করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সুরাইয়া আক্তার জাহান

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেন, গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী কার্যকর করতে হলে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা জরুরি প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের নিরপেক্ষ দ্রুত বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন উচ্চ আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা ব্যয়ের বিকল্প হিসেবে গ্রাম আদালত ইতিমধ্যে কার্যকর সমাধান হিসেবে কাজ করছে এখন দরকার আরও প্রচার, প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক সচেতনতা সারা দেশে স্থানীয় সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলোর সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে আমরা গ্রাম আদালত সম্পর্কে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বাড়াতে পারি

 তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষে সরকারের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান

মূল বক্তব্যে, বাংলাদেশে গ্রাম আদালতের বর্তমান অবস্থা, প্রতীয়মান সমস্যা এবং প্রতিকার বিষয়ে একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে প্রকল্পের জেন্ডার এনালিস্ট শামীমা আক্তার শাম্মী বলেন, গ্রামীণ এলাকায় কাঠামোগত সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নারী এবং প্রান্তিক জনগণ প্রায়ই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে, আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, তথ্যের অভাব, প্রক্রিয়ার জটিলতা, পরিবহন সমস্যা এবং সামাজিক পারিবারিক সীমাবদ্ধতা গ্রামীণ আদালত প্যানেলে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমাজে বিদ্যমান সংশয়, পুরুষ সদস্যদের সহানুভূতির অভাব এবং চেয়ারম্যানদের মতামত উপেক্ষা করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসে

বিশেষ করে নারী প্রান্তিক জনগণের ন্যায়বিচারের বিষয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হিজড়া সম্প্রদায়, দলিত দরিদ্র জনগণ গ্রামীণ আদালতের সেবা সম্পর্কে অবগত নন ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত গ্রামীণ আদালতে মোট ,৩৬,৮০৮টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬, ৯৬২টি নারী আবেদনকারীর মামলা ছিল সময়ে উচ্চ আদালত থেকে ১৪, ২১৪টি মামলা রেফার করা হয়েছে সাম্প্রতিক আইনি সংস্কারের কারণে মামলা দায়েরের হার আরও বেড়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ আদালতের আর্থিক এখতিয়ার ৭৫,০০০ টাকা থেকে ,০০,০০০ টাকায় উন্নীত হওয়ার পর বর্তমানে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ১৫% মামলার আর্থিক মূল্য ৭৫,০০০ টাকার বেশি এবং . % মামলা স্ত্রী কর্তৃক বকেয়া ভরণপোষণ আদায় সম্পর্কিত

এছাড়াও ভরণপোষণ সংক্রান্ত মামলা অন্তর্ভুক্ত হওয়া নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ তবে স্থানীয় নেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও যথাযথভাবে অবগত নয় এই বাস্তবতা ইঙ্গিত করে যে, কেবল আইনি সংস্কার যথেষ্ট নয়; বরং সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুমতাজ আহমেদ বলেন, নারী শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় হতে নারী শিশু এবং উন্নয়ন বিষয়ে পরিচালিত সব প্রকল্প প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আমরা গ্রাম আদালত সম্পর্কিত সচেতনতার তথ্য সম্পৃক্ত করা গেলে গণ সচেতনতায় একটি ভালো ফলাফল আমরা আশা করতে পারি একইসাথে বিচারকার্যে নারীদের বিচারক হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি গ্রাম আদালতকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে এর তথ্য প্রচার করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকেও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বাংলাদেশের ৬১টি জেলার ৪৪৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয় উচ্চ আদালতে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা উকিল নিয়োগের ব্যয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব এসব ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বড় সহায় হিসেবে কাজ করছে

বৈঠকে প্রকল্প পরিচিতি উপস্থাপন করেন জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্ত্তী

এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহন করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহানা সারমিন, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রালয়ের যুগ্ম সচিব হাজেরা খাতুন, মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব . প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের চীফ নিউজ এডিটর মীর মাসরুর জামান, ইউএনডিপির সিনিয়র গর্ভানেন্স তানভীর মাহমুদ, জেন্ডার লিড শারমিন ইসলাম এবং হেড অব কমিউনিকেশন মো. আব্দুল কাইয়ুমসহ আরও অনেকে

আলোচনায় তারা বলেন,  দ্রুত, সহজ স্বল্প ব্যয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি গ্রামীণ আদালতগুলোকে নারী প্রান্তিক জনগণের জন্য সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগভাবে কাজ করতে হবে সেই সাথে প্রকল্পপের শুরু হতেই গণমাধ্যকে অংশীজন হিসাবে সম্পৃক্ত করতে হবে